চিকিৎসকেরা আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন, তবে এআই যেভাবে তাঁর জীবন বাঁচাল

বছরখানেক আগের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের রেন্টন শহরের ৩৭ বছর বয়সী জোসেফ কোটস তখন ভীষণ অসুস্থ। তাঁকে বলা হয়েছিল, ‘আপনি বাড়িতে মারা যেতে চান নাকি হাসপাতালে?’ কোটস তখন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো অবস্থায় ছিলেন না। শারীরিক ও মানসিকভাবে ছিলেন পুরোপুরি বিপর্যস্ত

ডা. ডেভিড ফেগেনবম (বাঁয়ে) ও জোসেফ কোটসছবি: পেন মেডিসিনের ফেসবুক পেজ থেকে

জোসেফ কোটস আদতে পোয়েমস সিনড্রোম (POEMS Syndrome) নামে বিরল এক রক্তের ব্যাধিতে ভুগছিলেন। এতে তাঁর হাত-পা একরকম অচল হয়ে গিয়েছিল। হৃদ্‌যন্ত্র আর কিডনিও কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল প্রায়। কিছুদিন পরপর তাঁর পেট থেকে তরল বের করা হতো। এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন যে স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট করার মতো শারীরিক অবস্থাও ছিল না। কোনো আশাই আর অবশিষ্ট ছিল না। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জোসেফ কোটস বলেন, ‘আশা পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, পরিণতিটা (মৃত্যু) কোনোভাবেই আর এড়ানো গেল না।’

কোটস হাল ছেড়ে দিলেও তাঁর প্রেমিকা তারা থিওব্যাল্ডের মনের কোণে তখনো আশা জেগে ছিল। তিনি ফিলাডেলফিয়ায় বসবাসরত ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার অধ্যাপক ও চিকিৎসক ড. ডেভিড ফেগেনবমের সঙ্গে ই–মেইলে যোগাযোগ করেন। বিরল রোগবিষয়ক এক সামিটে সেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল এই জুটির। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেগেনবমের ফিরতি ই–মেইল পান তারা থিওব্যাল্ড। সেখানে একসঙ্গে কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি ও স্টেরয়েডের বিরল সমন্বয়ে নতুন করে চিকিৎসা শুরু করার পরামর্শ দেন ফ্যাজেনবাম।

পরামর্শমতো চিকিৎসা শুরু করেন কোটস ও তারা। আর মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করেন কোটস। চার মাসের মাথায় অর্জন করেন স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট করার মতো শারীরিক সক্ষমতা। এখন তিনি অনেকটাই সুস্থ, তবে চিকিৎসা চলছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, যে পদ্ধতিতে কোটসের স্বাস্থ্যের উন্নতি হলো, সেটা ডেভিড ফেগেনবম পেয়েছিলেন এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায়!

বিশ্বব্যাপী চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বিরল রোগের চিকিৎসা ও গবেষণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তা নিচ্ছেন। বিরল ও আগ্রাসী ক্যানসার, জটিল নিউরোলোজিক্যাল কন্ডিশনে প্রায়ই এআইয়ের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে সেসব কাজও করে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দুই লাখ মানুষ বিভিন্ন বিরল রোগে আক্রন্ত। যেসব রোগ সম্পর্কে চিকিৎসাবিজ্ঞানেও খুব বেশি কিছু জানা যায় না, অর্থাৎ এমন বিরল রোগ আছে হাজারো ধরনের। এসবের প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই অনুমোদিত চিকিৎসা নেই।

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক মেরিনকা জিটনিক বলেন, ‘একেকটি বিরল রোগের ধরন, উপসর্গ বিশ্লেষণ করে নতুন নতুন ওষুধ তৈরি করা খুবই জটিল এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ওষুধের উপকরণ, গুণাগুণ এবং রোগের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে এআই সহজেই চিকিৎসাপদ্ধতি ও ওষুধ সম্পর্কে পরামর্শ দিতে পারে। আবার কোন ওষুধের সঙ্গে কোন ওষুধ মেশালে শরীরে তা কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে, সে সম্পর্কেও ধারণা দিতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। অনেক সময় অন্য রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ওষুধ এআইয়ের পরামর্শ অনুসারে অনেক অজানা রোগেও ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন “মিনোক্সিডিল” নামের ওষুধটি আগে কেবল উচ্চরক্তচাপ উপশমে ব্যবহার করা হতো, সেটি এখন বিশেষ ধরনের চুল পড়ার সমাধানেও ব্যবহৃত হচ্ছে।’

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এটি একটি বিশেষ এবং বিরল ঘটনা। লেখাটি কোনোভাবেই কোনো রোগবালাইয়ে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে অনুপ্রাণিত করে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *